দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হতে পারে লাল কাঁকড়ার ঝাঁক নয়, এযেন লাল কার্পেট বিছানো কোন স্থান। বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো অতিথি পাখির নয়নাভিরাম দৃশ্য ভরিয়ে দেবে মন। চারদিকে অথৈ জলের মাঝে এ যেন অন্য এক দুনিয়া।
সমুদ্রের মাঝখানে আবিস্কৃত দ্বীপটির আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার একর। জানা গেছে, আব্দুল হাই নামে এক মাঝি প্রথম এই চর আবিষ্কার করেন বিধায় ‘হাইয়ের চর’ নামে সমধিক পরিচিতি পায় দ্বীপটি। তবে বর্তমানে এই চরটির নাম বদলে নাম করন করা হয়েছে ‘চর বিজয়।’
বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা পর্যটন স্পট থেকে দক্ষিণ পূর্বে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণে ৩০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষে দ্বীপটির অবস্থান।
লাল কাঁকড়া আর লাখ লাখ অতিথি পাখির বিচরণে আকাশ আর চর মিলে একাকার হয়ে আছে। এর মধ্যে অনায়াসে কাজ করে যাচ্ছেন জেলেরা। কেউ জাল বুনছে, কেউ মাছ বাছাই করছে, কেউ ট্রলার বা নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম করতে করতে খোশগল্পে মেতে আছেন। অনেকে আবার শুটকি তৈরিতে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করছেন।
দেখে মনে হবে এটি নতুন কোন স্থান নয়। জেলেদের কাছে বছরখানেক আগে জেগে ওঠা এই চরটি খুব পরিচিত হলেও সম্প্রতি দর্শনার্থীদের আগ্রহরে কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে দুই ঘণ্টার নৌপথে পারি দিয়ে সাগরের মাঝের স্থলভূমিটি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গামতি সমুদ্রসৈকত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সাগরের মধ্যে চরটি জেগে উঠেছে। এটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক চার কিলোমিটার এবং প্রস্থ দুই কিলোমিটার।
ইতিমধ্যে যারা চরটিসহ কুয়াকাটা ভ্রমণ করেছেন তারা জানালেন, কুয়াকাটার কাছেই গভীর সমুদ্রে এমন চোখ জুড়ানো একটি দ্বীপ আছে, তা চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমাদের দেশে এরকম একটি চর জেগে উঠছে, এটি কুয়াকাটার জন্য আর্শিবাদ।
লাল কাঁকড়ার ঝাঁক দেখলে মনে হবে যেন ঝরা হিজল ফুল বিছিয়ে আছে গোটা চরে। চারিদিকে অথৈ সাগরে ঘেরা এই চরটিতে সব সময় থাকে হাজারো অতিথি পাখির কোলাহল। নানান প্রজাতির পাখি, ছোটমাছ, লাল কাঁকড়া সহ এ চরটি যেন টুরিস্ট প্রিয় মানুষদের প্রতি আল্লাহর এক অপার অনুগ্রহের নমুনা।
জেলেদের মতে, বর্ষাকালে অতিরিক্ত জলোচ্ছ্বাস হলে চরটির দুই-তৃতীয়াংশ ডুবে যায়। শীত মৌসুমে বিশাল এই চর জেগে ওঠে। শীত মৌসুমজুড়ে জেলেরা ওই দ্বীপে গিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে থাকেন মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরির জন্য। জেলে নিজাম মাঝি বলেন, পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে থেকে চরটি শীত মৌসুমে জেগে ওঠে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এ চরটি উদ্ভাবন করেন সাংবাদিক হোসাইন আমির, ফটোগ্রাফার আরিফুর রহমান, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মাও মাঈনুল ইসলাম মান্নান, কুয়াকাটা সী ট্যুরিজমের পরিচালক ও শিল্পী জনি আলমগীর, ঢাকার দুই পর্যটকসহ মোট ১৩ জন । বিজয়ের মাসে এ চরটাকে খুজে পাওয়ায় তার নাম দেওয়া হয় ‘চর বিজয়’।